আলোর মনি রিপোর্ট: জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে নিজের শিশু সন্তানকে হত্যা করে কৌশলে আপন ভাইদের ফাঁসায় লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের বড় কমলাবাড়ী গ্রামের মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র মোঃ রুহুল আমিন (৫২)। সেই ঘটনায় মোঃ রুহুল আমিন ভাই, ভাবী ও ভাতিজাকে ফাঁসাতে দায়ের করেন হত্যা মামলা। নিজের করা সেই হত্যা মামলায় নিজেই ফেঁসে গেলেন মোঃ রুহুল আমিন। ক্রিমিনাল ইনভেষ্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) লালমনিরহাট জেলার তদন্তে ৬বছর পর বেড়িয়ে এসেছে আসল রহস্য।
বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বিকালে ইনভেষ্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) লালমনিরহাট জেলা কার্যালয়ে মিট দ্যা প্রেসে এমনটিই জানিয়েছেন সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আতাউর রহমান।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মোঃ রুহুল আমিনের কনিষ্ঠ পুত্র ইয়াছিন আরাফাত (১১) সন্ধ্যার পর বাড়ির পাশের দোকানে গুল কিনতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। এজাহারে তিনি জানিয়েছে তার কনিষ্ট পুত্র ইয়াছিন আরাফাতকে অনেক খোঁজাখুজির পরও পাননি তারা। পরদিন সকালে কান্নাকাটি ও চিল্লাচিল্লির শব্দ পেয়ে মোঃ রুহুল আমিন ছুটে গিয়ে দেখতে পান তার পুত্র ইয়াছিন আরাফাতের লাশ ছেড়া চট দিয়ে ঢাকা অবস্থায় তার আপন ছোটো ভাই আবু তাহেরের গোয়াল ঘরের পিছনে মাটিতে পড়ে আছে। এরপরেই মোঃ রুহুল আমিন তার শিশু পুত্রকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ এনে ভাই, ভাবী ও ভাতিজাকে আসামী করে আদিতমারী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকেই মোঃ রুহুল আমিন তার বড় ছেলে মোঃ সোহেল রানাসহ সপরিবারে আত্মগোপনে থাকেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তারা কোনো প্রকার সহযোগীতা করেননি। এমনকি মামলার তদন্তে পুলিশ তাদের বাড়িতে গেলেও কাউকে পাননি। এরপর আদিতমারী থানা পুলিশ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করার পরই মোঃ রুহুল আমিন এলাকায় আসেন এবং মামলা সংক্রান্ত না রাজি করে আবারও নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
এরপরেই আদালতের নির্দেশে এই হত্যা মামলার তদন্তে নামে সিআইডি। অনুসন্ধানের পর বেড়িয়ে আসে মূল হত্যাকারী শিশুটির পিতা। সিআইডির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মোঃ রজব আলী (৫৫) জানান, ইয়াছিন আরাফাতকে মোঃ রুহুল আমিন ও মোঃ সোহেল রানা হত্যা করেছে।
এরপরেই চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের বড় কমলাবাড়ী এলাকা থেকে মোঃ রুহুল আমিনকে আটক করা হয়। এরপরেই মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ রজব আলী ও মোঃ সোহেল রানা ইয়াছিন আরাফাতকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে এবং কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তা ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে বর্ণনা দেন মোঃ রজব আলী।
দীর্ঘ ৬বছর পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উদঘাটন করতে প্রশংসিত হয়েছেন ইনভেষ্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) লালমনিরহাট জেলা।
২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইনভেষ্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) লালমনিরহাট জেলার এডিশনাল বিশেষ পুলিশ সুপার এর দ্বায়িত্ব পান মোঃ আতাউর রহমান। তিনি যোগদানের পর থেকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনসহ আরও ৬টি দীর্ঘদিনের পুরাতন মামলার রহস্য উদঘাটন ও সকল মামলায় মোট ৩০জন আসামীকে গ্রেফতার করে মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।